মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম :: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আলীকদম উপজেলার জন্য আসা বরাদ্দের ২৮ লাখ টাকা ফেরত গেছে। এ উপজেলায় গত অর্থবছরের শুরু থেকেই ধীরগতি ছিল বার্ষিক এডিপি বাস্তবায়নে। এডিপি কমিটির আভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের কারণে সঠিক সময়ে প্রকল্প গ্রহণ না করায় সময় স্বল্পতার কারণে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা যায়নি। এ কারণে এডিপির ২৮ লাখ টাকা ফেরত গেছে বলে জানা গেছে। এতে উপজেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপির মোট বরাদ্দ ছিল এ জন্য মোট ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি), কোটেশন বিজ্ঞপ্তি ও টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৫১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়সীমা দেওয়া হয় ১০-১৪ দিন। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রিংওয়েল স্থাপন ও সংস্কার, ব্রিক সলিং রাস্তা, গাইডওয়াল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যাগ ও টিফিন বক্স বিতরণ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪ শ’ টাকায় ৭ গ্রুপে টেন্ডার দেখিয়ে অবশিষ্ট ৬৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় কোটেশন ও পিআইসি দিয়ে তড়িগড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় এলজিইডি। এতে দুর্নীতি করার অবারিত সুযোগ তৈরী করে এলজিইডি।
ঠিকাদারদের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মে টেন্ডার আহ্বান করে মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার সময় বেঁধে দেন এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী। অল্পসময়ে সময়ে এসব কাজ শেষ করা সম্ভব ছিল না। এতে অভিযোগ ওঠে, প্রকল্প শুরু না করেই ‘কাজ সম্পন্ন’ দেখিয়ে বিল উত্তোলনের প্রস্তাব দেয় এলজিইডি।
জানা গেছে, গত ২৮ জুনের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ নিয়ে এলজিইডি, এ উপজেলা থেকে বদলী হওয়া ইউএনও সায়েদ ইকবাল ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও কাজী শামীম এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় সঠিক সময়ে এডিপির প্রকল্প গ্রহণের বিলম্ব হয়। ফলে নতুন ইউএনও যোগদান করার পর অর্থবছরের শেষের দিকে মে মাসে প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর রিংওয়েল স্থাপন ও সংস্কার খাতে অধিকাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে খাতওয়ারী বিভাজনকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
ঠিকাদার আব্দুল হামিদ জানান, শুধুমাত্র ১৪দিন সময় দিয়ে কার্যাদেশ তৈরী করে এলজিইডি। তাদের কাউকে এলজিইডি থেকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। তারপরও অধিকাংশ ঠিকাদার ৭০-৮০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত করেন।
২৮ জুনের মধ্যে দুটি কাজ শুরুই করা যায়নি বলে জানিয়েছেন এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ। তার দাবী, অবশিষ্ট প্রকল্পের কাজ ১০ দিনের মধ্যেই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ জন্য অবশিষ্ট কাজ না হওয়ায় মোট ২৮ লাখ টাকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এডিপি’র প্রকল্পের অর্থ ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় স্বল্পতা হলে অন্যান্য বছরগুলোতে আমরা প্রকল্পের টাকাগুলো পে-অর্ডার করে রাখতাম। এ বছর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলী অব্যবহৃত অর্থ ‘পে-অর্ডার’ করে রাখতে একমত না হওয়ায় প্রকল্পের টাকাগুলো ফেরত গেছে। আমার অফিসে যেসব ফাইল পাঠানো হয়েছে সাথে সাথে আমি অনুমোদন দিয়েছি। হিসাব রক্ষণ অফিস কেন এসব বিল পাশ করেনি তা আমার বোধগম্য নয়।
পাঠকের মতামত: